শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
একজন লেখক প্রতিষ্ঠা পান তখন-যখন পাঠক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। নাজমুন নাহার একজন তরুণ কবি ও আইনজীবী। তাঁর কবিতায় আছে যেমন প্রকৃতি, দেশপ্রেম, ভালবাসা, শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন, অসাম্প্রদায়িকতা আর সাধারণ মানুষ-তেমনি আছে স্বচক্ষে দেখা বর্তমান বিভীষিকাময় দিনগুলো। সাহসী, তীক্ষè বিবেকবান এ তরুণ লেখক ১৯৭৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চট্রগ্রামের হালিশহরে নৌ বাহিনী কলোনীতে সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেশব্যাপী চরম অরাজকতা, বন্যা, খরাসহ নানা অশান্তির সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোর মধ্যে বেড়ে উঠা এ তরুণ লেখকের এটি তাঁর ১ম গ্রন্থ। এ গ্রন্থে যেমন আছে প্রেম, বিপ্লব, নারীর অধিকার আর সমকালীন পরিস্থিতি-তেমনি আছে বঞ্চিতের প্রতারিতের ক্ষোভ, কান্না আর যন্ত্রনা। তাঁর রচনার সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে হালকা হাসির ফোয়ারা আর অন্তরে রয়েছে ক্ষোভের কাটা, ব্যথিতের অশ্রুর ফোটা। অন্যদিকে তাঁর লেখায় রয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামী আর সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ। লেখক আইনপেশায় যুক্ত হয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মিশেছেন, কথা বলেছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাদের জীবনতন্নিষ্ট প্রকৃতি, সামাজিক মূল্যহীনতা, মানবীয় টানাপোড়েনসহ জীবন-যাপনের নানা অনুসঙ্গ। মানুষের অন্তর্গত ও প্রকৃতিগত বিষয়াবলী তাকে কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কবিতায় তিনি শৈল্পিক পারঙ্গমতায় তুলে এনেছেন প্রেম-বিরহ-দ্রোহ, প্রকৃতি-পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়। চলমান একুশের গ্রন্থমালায় দেশের নাম করা কবি, সাহিত্যক ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে খোলা মঞ্চে ইতোমধ্যে বইটির মোড়ক উম্মোচিত হয়েছে।
দেশপ্রেম, জীবনবাস্তবতা, রাজনীতি, সমাজ-চিত্র, প্রেম-দ্রোহ নাজমুন নাহারের কবিতার উপজীব্য। কল্পনার রঙিন চরকায় না ঘুরে খোলামেলা যা দেখেছেন, জীবনচিত্রে সংযোজিত নানা অভিজ্ঞতা, আনন্দ ও সংক্ষুব্ধতায় কবিতার শরীর নির্মাণ করেছেন তিনি। তার কবিতা একদিকে যেমন পাঠক হৃদয়ে রোমান্টিক শুভ্রতা এনে দেয়, তেমনি দ্রোহের আগুনে পোড়ায় হৃদয় মন। একই সঙ্গে সমাজের নানান অসঙ্গতিচিত্র পাঠককে ভাবিত করে।
‘ধূলো মাখা রোদ্দুর’ বইটি প্রকাশ করেছেন ঢাকার বিখ্যাত প্রকাশনী সংস্থা ‘দূরবীণ’। বইটি এ বছরের ফেব্রয়ারী মাসে একুশে বইমেলা প্রথম আসে। সেই থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
তাঁর কাব্য নিয়ে ঢাউস গ্রন্থ রচনা করা যায়। কিন্তু সেটা আমাদের জন্য শোভন হবে না। হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ আমি কবি নই। আমি কবিতা লিখতে পারি না। আমি আইনের মানুষ। আইন নিয়ে লিখি, আইন গবেষণা করি। কবিতা নিয়ে গুরুগম্ভীর কথা বলা আমাকে মানায় না। একজন কবি আমাকে প্রশ্ন করলে আমার জবাব দেয়ার কিছু থাকবে না।
তার চেয়ে বরং কবি নাজমুন নাহারের ব্যক্তি জীবন নিয়ে লেখা আমার জন্য অনেকখানি নিরাপদ। আমি বরং সেইদিকে কামান ঘুরিয়ে দেই। কবির সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি দেখা হয় ২০০৭ সালে। তখন আমি কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আইন পেশা শুরু করি। সেই আইন পেশা ও লেখালেখির সুবাদেই সখ্যতা। এ্যাডভোকেট নাজুমন নাহার কুষ্টিয়া জজ কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী ও এজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএল,বি (সন্মান), এলএল,এম ডিগ্রি অর্জনের পর কুষ্টিয়া জজ কোর্টে একজন আইনজীবী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিও বটে। রাজনীতিতেও রয়েছে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। বর্তমান তিনি কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।